শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
সুন্দরগঞ্জে সড়ক তো নয় যেন বাড়ির উঠানঃ ঝুঁকিতে পথচারি ও যানবাহন গাইবান্ধায় মেঘ দেখলেই কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যস্ত সময় গাইবান্ধার জেনারেল হাসপাতাল বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিতঃ দালালদের দৌরাত্ম্যঃ রোগীদের মাঝে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন কুপতলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু সাদুল্লাপুরে পিকিং জাতের হাঁস পালনে তাক লাগিয়েছে সোহাগ সুন্দরগঞ্জে ১১ মাস অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধঃ রোগীদের ভোগান্তি সুন্দরগঞ্জে গ্রাম পুলিশদের প্রশিক্ষণ শুরু ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ীরা গোবিন্দগঞ্জে লেবু হত্যার আসামীকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার চরাঞ্চলে ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা নেই বললেই চলে। ফলে প্রাথমিকের গ-ি পেরোতেই ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ঝরে পড়ছে অকালে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে জেলার সামগ্রিক শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর। অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে বাল্যবিয়েসহ শিশুশ্রমে।
গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি এই চার উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় সবমিলিয়ে ১৬৫টি চর-দ্বীপচর রয়েছে এ জেলায়। শিক্ষার্থী ও কথিত ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে চলছে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের পর্যাপ্ত স্কুল না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পাস করার পর ঝরে পড়ছে বেশিরভাগ শিশু। এদের মধ্যে ছেলেরা নিয়োজিত হচ্ছে কৃষিকাজে। আর অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার চরাঞ্চলে অন্তত চার লাখ মানুষের বসবাস। নদীতীর সংলগ্ন ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদরাসা থাকলেও চরে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
গাইবান্ধা সদরের ব্রহ্মপুত্রের চর কাবিলপুরচরের বাসিন্দা জুনাইদ সিদ্দিকী পড়েন গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। তিনি জানান, ওই চর থেকে গতবছর ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করলেও হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে সাতজন।
তিনি বলেন, চর এলাকায় হাই স্কুল না থাকাই ঝরে পড়ার মূল কারণ। মূল ভূখ- উপজেলা কিংবা জেলা শহরে পড়তে হলে অনেক দূরের পথ অতিক্রম করতে হয়। অনেকেই হাই স্কুলে ভর্তি হলেও মাঝপথে ঝরে পড়ে যাতায়াত ও আবাসন সংকটের কারণে।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী গুনভরি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বছর পড়ার পর যাতায়াত সমস্যার কারণে আর স্কুলমুখো হয়নি মমেনা খাতুন। সে জানায়, তার সঙ্গী হাসনা, রেখা ও তাহেরা পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর স্কুলে যায় না। নদী পার হয়ে একা স্কুলে যেতে ভয় লাগে তার।
চর কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল হাসান জানায়, চরের শিশুদের লেখাপড়া করার অনেক ইচ্ছা থাকলেও আশপাশে হাই স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতে হয় তাকে।
কালাসোনা চরের তিন সন্তানের জনক হবিবুর রহমান (৬০)। তার দুই ছেলে আলাল ও দুলাল। তারা পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আর স্কুলে যেতে পারেনি। তারা এখন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তৃতীয় সন্তান হাবিবা বাড়ির পাশে স্কুল থাকায় সে পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে। নদী পার হয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান হবিবুর।
তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, হামরা (আমরা) গরিব মানুষ। বাহিরে নেখাপড়া করাইতে অত ট্যাকা কই পামো (পাবো)? পড়াশুনার খরচা, নাও (নৌকা) ভাড়া দেওন নাগে। নদী পার হতে গেলে কখন কী হয়। মেলা (অনেক) সমস্যা।
সরকারি পরিসংখ্যানে গাইবান্ধা জেলায় স্বাক্ষরতার হার ৬৬ ভাগ। চরাঞ্চলের শিক্ষার নিম্নহারের কারণে জেলায় বাড়ছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব।
কথা হয় মানবাধিকারকর্মী আব্দুল কাদের ভূইয়া আকাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুর্গম চরে যাতায়াত সমস্যা প্রকট। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ নেই। যেহেতু চরগুলো প্রায়ই নদীভাঙনের কবলে পড়ে সেক্ষেত্রে প্রতিটি চরে অস্থায়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থাপন করা হলে ওইসব এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের অকালে ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করা যেতো।
তথ্য বলছে, জেলায় নদীতীর সংলগ্ন দুটি মাদরাসাসহ ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর চরে ১১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই চরাঞ্চল থেকে ৯৮ ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিকের গ-ি পাস করলেও অর্ধেকেরও বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com